Add caption |
ছত্রিশ মিনিট হল সুমাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। সে অপেক্ষা করছে রাকিবের জন্য। সেই কতক্ষণ হয়েছে, সে ফোন করছে? কিন্তু এখনও আসার নাম নেই রাকিবের। অপেক্ষা করতে করতে ধৈর্য্য ভেঙ্গে আসতে চাচ্ছে। ‘আজ এমন একটা দিন। আজও রাকিবের দেরী!’ মনে মনে ভাবছে সুমাইয়া। না আর অপেক্ষা করা যায় না। ধৈর্য্যের একটি সীমা আছে। রাস্তা লোক গুলো তাকিয়ে আছে ওর দিকে। তাকাবে নাই বা কেন? একটি মেয়ে লাল শাড়ি, সাদা ব্লাউজ। কপালে লাল টিপ। তার চুলগুলো ছঁড়িয়ে আছে সারা পিঠে। আজ একটু অন্য রকম ভাবে সেজেছে ও। তাহলে তো লোকজন তাকাবেই। না রাকিব বোধ হয় আজ আর আসবে না। সুমাইয়া হাঁটা দিল। বাসায় চলে যাবে। কিন্তু তার আজ বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না। হঠাৎ পিছন থেকে একটি গলার স্বর ভেসে এল।
‘এই সুয়া, দাড়াঁও।’ রাকিবের গলা মনে হচ্ছে। আর এই ভাবে ওকে কেউ ডাকে না। একমাত্র রাকিবেই ডাকে। মনটা খুব খারাপ হয়ে ছিল। কিন্তু তখন আবার হঠাৎ আনন্দে ভরে গেল। পিছনে ফিরল সুমাইয়। হ্যাঁ রাকিবেই দাঁড়িয়ে আছে। সাথে সাথে আবার মনটা খারাপ হয়ে গেল। সাথে সাথে জ্বলে উঠল রাগে তার শরীরটা। রফিক দাঁড়িয়ে আছে ঠিকই। কিন্তু তার পরনে একটি কালো টি সার্ট। নীল ট্রাউজার। হাতে একটি ডায়েরী।
আজ এমন দিনেও, এমন পোষাক পরে আসল। রাকিবের দিকে এগিয়ে গেল ও। রাকিবের মুখে আলতো একটা হাসি। সবসময় এই হাসিটা সুমাইয়ার খুব ভাল লাগে। কিন্তু আজ হাসিটা যেন গাজ্বালিয়ে দিচ্ছে। ‘কি ম্যাডাম? আসতে বলে চলে যাচ্ছেন।’
‘এখন সময় কত?’ কথার জবাব না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল সুমাইয়া।
‘কত আর? শোয়া নয়টা সামথিং।’
‘আমি ফোন দিয়েছি নয় টায়।’
‘তো?’
‘আর তোমার এখন আসার সময় হল।’
‘হেটে এসেছি তো তাই।’ বলে একটি মুচকি হাসি দিল রাকিব।
‘হাসবে না তুমি। শরীর জ্বলে যায়। হেটে এসেছো কেন?’
‘কি করবো বল? টাকা ছিল না।’
‘আচ্ছা, ওকে। মেনে নিলাম। কিন্তু এটা কি পরে এসেছ? একটা
পাঞ্জাবী পরে আসতে পারনি?’
‘কেনখারাপ লাগছে? "
‘তুমি আর কথা বলো না।
একটা ফুল ও আনতে পারোনি? কি নিয়ে এসেছে? ডায়েরীটা।
এটা কি যে সারাদিন নিয়ে ঘুরতে হবে?’
সুমাইয়া ক্ষেপে গেল। রাকিবের হাত থেকে ডায়েরিটা নিল। ছুঁড়ে ফেলে দিল রাস্তার পাশে ম্যানহোলে। সাথে সাথে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিল সুমাইয়া। রাকিব দৌড়ে গেল ম্যানহোলের কাছে। ডায়েরীটা আনল।
‘তুমি এটা ফেলে দিলে কেন?’
‘কি? আজ ভ্যালেন্টাইন ডে। আর তুমি এসোছো কি পরে? একটি টি সার্ট আর ট্রাউজার। তাও ব্লাক টি র্সাট। তুমি কি শোক দিবস পালন করবে আজ?’
রাকিব কিছু বলল না। চুপ করে শুনছিল সুমাইয়ার কথা। ডায়েরীটা পড়ে শোনানোর চেষ্টা করছে। রাব্বিকে চুপ দেখে আরো ক্ষেপে গেল সুমাইয়া।
‘কি কথা বলছো না কেন?’
‘কি বলবো? তুমি বল আমি শুনি।’
‘কি বলবা শুনি? আজ যে ভ্যালেন্টাইন ডে, এটা তুমি জানতে না।’
‘মনে ছিল না।’
‘কি ? মনে ছিল না।’
আবার কেঁদে ফেলে সুমাইয়া।
রাকিব অপ্রস্তুত হয়ে যায়। রাস্তার লোকজন তাকিয়ে দেখছে তাদের। আবার বলে সুমাইয়া।
‘আমার প্রতি তোমার কোনো ফিলিংস নেই। আমাকে তুমি গুরুত্বই দাও না। আজ দিনটার কথাও
ভুলে গেছো।’ বলে সুমাইয়া কাঁদতে থাকে। আবার বলে চোখ মুছে।
‘না । তোমার সাথে আমার হবে না। তুমি চলো তোমার মত। আমি চলি আমার মতো।’
দুজনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কোনো কথা বলছে না। কিছুক্ষণ পর হাঁটা দিল রাকিব।
‘দাঁড়াও। কিছু না বলে চলে যাচ্ছো কেন?’
‘কি বলবো? তুমি তো সব বলে দিলে। সমাধানও
দিলে। এখানে আমার কি বলার আছে?’
‘তাই বলে কিছু বলার নেই ?’
‘আছে। থাকবেনা কেন?’
কিছুক্ষন বিরতি নিয়ে
আবার বলতে শুধু করল রাকিব।
‘আমার মনে নেই যে, আজ ভ্যালেন্টাইন ডে। কিন্তু
তোমার কাছে কোনটা বড়? ভ্যালেন্টাইন ডে না আমি।’
‘তুমি কিন্তু।’
‘থামো। আগে শোনো। আমি পুরোটা বলা শেষ করি। যদি কিছু বলার থাকে, পরে বলো।’
‘ওকে।’
আবার বলতে শুরু করল।
‘তুমি বলেছো, তোমার প্রতি আমার কোনো ফিলিংস নেই। তোমার কাছে আমার ভালবাসার থেকে বড় হল একটি গোলাপ। তোমার প্রতি যদি আমার ফিলিংস নাই থাকে। তাহলে তোমাকে যে ভালবাসি, এটা কি? এই প্রশ্নের উত্তরে তুমি কি বলবে? কিছু বলবে? পারবে না। আজ আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে। রবীন্দ্রনাথের সেই প্রশ্নটা, “সখি ভালবাসা কারে কয়?” তুমি আমার ডায়রীটা ম্যানহোলে ফেলে দিলে। তুমি জানো ওটা, আমার কবিতার ডায়েরী। ওটাতে আমার মাকে নিয়ে লেখা, প্রিয় কিছু কবিতা আছে। তারপরও তুমি ওটা ফেলে দিলে। এই যদি হয় ভালবাসা। তাহলে আর কি করার? এখন তোমার মনে হয় আমাদের সম্পর্ক এখানেই থামিয়ে উচিত। তাহলে আমার কিছু বলার নেই। তুমি মুক্ত। আবার থাকতেও পারো। তোমার খুশি। এখন সিদ্ধান্ত তোমার।’
দুজন আবার চুপ। কারো মুখো কোনো কথা নেই। সুমাইয়া ভাবছে। কি করবে সে? রাকিবের কথা মিথ্যা নয়। রাকিব তো একটু মন ভুলা। ওকে তো দোষ দেওয়া যায় না। রাকিবকে তো ও মঅন্ধের মত ভালোবাসে। তাহলে ও কি পারবে রাকিবকে ছাড়া কিছু ভাবতে? না। একটি মুহুর্তও না। রাকিব ও চুপ করে রইল। আজ আকাশটা কালো হয়ে এসেছে। মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে। কিন্তু আজ ওদের মনে ভিতরে যে মেঘ জমে আছে। তা ওরা কি করে ঝরাবে। ঝরবে কি ওদের মনের কালো মেঘ? রাকিব একটা রিক্সা ডাকল। এই শীতেও হালকা ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। রাকিব রিক্সার উঠে বসল। একপাশে সরে বসল রাকিব। হঠাৎ বৃষ্টির পরিমান বেড়ে গেল। প্রকৃতি হয়তো বুঝতে পেরেছিল। কি চলছে ওদের মনে? তাই সে কান্না হয় ঝরতে সাহায্য করল। যাতে ওদের মন হতে সরে যায় কালো মেঘ। বৃষ্টির মাঝে চলছে রিক্সা। এভাবেই হয়তো চলবে ওদের জীবন। মেঘ বৃষ্টির মতো। মেঘ হবে। আবার তা ঝরবে বৃষ্টি হয়ে।
মুঃ সাইদুল শিকদার রণি
0 Comments